জাতীয় পরিচয়পত্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। এটি ছাড়া সরকারী বেসরকারি কোন সেবা পাওয়াই দায়। তাই যারা কোন কারনে এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি বা ভোটার হননি তাদের জন্য আজকের এই আলোচনা। আজ আমরা জানবো কিভাবে নতুন ভোটার হওয়া যায় বা নিবন্ধন করা যায়। চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র হালনাগাদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। যিনি বাংলাদেশের নাগরিক কিন্তু এখনও নিবন্ধিত হননি, আপনার বয়স যদি ১০ বছর বা তার বেশি হয়ে থাকে কিন্তু এখনও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হননি তাহলে অনলাইনে ভোটার ফর্ম নং ২ পূরণ করে আপনার সিডিউল মোতাবেক সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে বায়োমেট্রিক প্রদান করার মাধ্যমে ভোটার হতে পারবেন।
নতুন ভোটার হওয়ার শর্ত
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- বিদেশী নাগরিকগন ভোটার হতে বা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে পারবেন না।তারা শর্ত সাপেক্ষে পাসপোর্ট করতে পারবেন।
- আপনার বয়স ১০ বছরের উপরে হতে হবে। তবে ১৮ বছর পূর্ণ হলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
- নতুন ১৮ বছর বয়সের অধিক, প্রবাসী বা বাদপড়া ভোটারগণ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন।
- ইতোপূর্বে কখনো ভোটার বা জাতীয় পরিচয়পত্র হওয়ার আবেদন করেননি।
ভোটার হতে যা যা প্রয়োজন
- অনলাইনে পূরণকৃত ফর্মের প্রিন্ট কপি
- এস.এস.সি বা এইচ.এস.সি সনদ(বয়স প্রমাণের সনদ)
- ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন -(বয়স প্রমাণের সনদ)
- পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / টি.আই.এন -(বয়স প্রমাণের সনদ)
- ইউটিলিটি বিলের কপি/বাড়ী ভাড়ার রশিদ/হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ – (ঐ এলাকায় সচরাচর বসবাস করেন এরুপ কোন প্রমাণ)
- নাগরিকত্বের বা স্থানীয় জনিপ্রতিনিধীর পক্ষ থেকে সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- বাবা-মা্র ভোটার আইডি কার্ড।
- বিবাহিত হলে স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি(প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার
নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম
আপনি যদি নতুন ভাবে ভোটার হওয়া বা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করতে চান, তাহলে দুইভাবে করতে পারবেন। যথা-
- অনলাইনের মাধ্যমে।
- অফলাইনের মাধ্যমে।
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশে ভোটার তথ্য হালনাগাদের কাজ কিছু দিন পর পরই হয়ে থাকে। এই সময়ে যারা বাদ পড়েন বা প্রবাশে থাকার কারনে ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারেননা তার সরাসর স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম নং ২ পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজ সাথে জমা দিয়ে ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারেন।
এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমেও নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আবেদনের প্রিন্ট কপির সাথে যুক্ত করে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে।
এখন যদি অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার হওয়ার আবেদন করতে চান, তাহলে প্রথমে আপনাকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর আবেদন করা যাবে। নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে নিবন্ধন করার পর কিভাবে আবেদন করা যা, তা নিম্মের ধাপগুলোর মাধমে চিত্র সহ দেখানো হলো।
আরো জানুনঃ
ধাপ-১ঃ নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে প্রবেশ।
অনলাইনে নিবন্ধন ও আবেদন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে প্রবেশ। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইট তথা https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই ঠিকানায় প্রবেশ করতে হবে। উক্ত ঠিকানায় প্রবেশ করলে নিচের পেইজটি ওপেন হবে।
ধাপ-২ঃ আবেদন করুন বাটনে ক্লিক করুন
উপরের পেইজটি ওপেন হওয়ার পর নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করুন বাটনে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর নিম্মের পেইজটি ওপেন হবে।
প্রথম বক্সে আপনার জন্ম সনদ বা বোর্ড পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী ইংরেজীতে পুরো নাম এবং জন্ম তারিখ দিন। এর পর ছবিতে প্রদর্শিত ক্যাপচা কোড পূরণ করুন। তারপর শেষে কালো চিহ্নিত বহাল বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৩ঃএকাউন্ট নিবন্ধন করতে নাম ও জন্ম তারিখ দিন
উপরের পেইজের “বহাল” বাটনে ক্লিক করার পর নিচের পেইজটি চলে আসবে।
এই ধাপে আপনার সচল ও সঠিক একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। পরবর্তীতে এই নম্বরেই এস.এম.এস পাঠানো হবে। সঠিক মোবাইল নম্বর দিয়ে “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৪ঃ মোবাইল নম্বর ভেরিফাই।
তৃতীয় ধাপের পেইজে “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করার পর নিচের পেইজটি ওপেন হবে।
যখন মোবাইল নম্বর বসিয়ে “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করেছেন তখন আপনার মোবাইলে একটি OTP কোডট চলে গেছে। তারপর এই পেইজে আপনার মোবাইলে পাঠানো OTP কোডটি বসিয়ে “বহাল” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৫ঃ ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড সেট
চতুর্থ ধাপের পেইজে “বহাল” বাটনে ক্লিক করলেই নিচের পেইজটি ওপেন হবে।
এই পেইজে আপনার একটি ইউজার নেইম ও একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। কেননা পূনরায় লগইন করতে এই ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড দরকার হবে। পাসওয়ার্ড সেট করার পর “বহাল” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৬ঃ ব্যক্তিগত প্রফাইলে প্রবেশ
৫ম ধাপের পেইজে “বহাল” বাটনে ক্লিক করলেই আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে নিম্মের প্রফাইল পেইজে।
এই পেইজে “বিস্তারিত প্রোফাইল” বাটনে ক্লিক করুন। তারপরে প্রফাইলের তথ্য এডিট করার জন্য প্রোফাইল পেইজের ডান কর্নারে থাকা “এডিট” বাটনে ক্লিক করুন। “এডিট” বাটনে ক্লিক করার পর আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান ফাইলে।
ধাপ-৭ঃ ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান।
এই পেইজে সেসব তথ্য প্রদান করতে হবে তা হলো-
- নিজের তথ্য।
- পিতার তথ্য।
- মাতার তথ্য।
- অপ্রাপ্ত হলে অভিভাবকের তথ্য।
- বড় ভাই/বোনের তথ্য।
উপরের তথ্যগুলো নিজের জন্ম সনদ/শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। আর বাকীদের তথ্য তাদের NID কার্ড অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। এর পর নিচের “পরবর্তী বাটনে” ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৮ঃ অন্যান্য তথ্য প্রদান।
৭ম ধাপের পেইজে “পরবর্তী বাটনে” ক্লিক করলে নিম্মের অন্যান্য তথ্য প্রদান পেইজে নিয়ে আসা হবে।
এই ধাপে অন্যান্য তথ্য প্রদান করতে হবে। এখানে তারকা চিহ্নিত ঘর গুলো অবশ্যই পূরন করতে হবে।যেমন-
- শিক্ষাগত যোগ্যতা।
- পেশা।
- অসমর্থতা(কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকলে সিলেক্ট করুন)।
- সনাক্তকরন চিহ্ন।
- ধর্ম ইত্যাদি।
সব তথ্যগুলো পূরণ করে ঠিকানা অপশনে ক্লিক করতে হবে। এর পর আসবে ঠিকানা পেইজ।
ধাপ-৯ঃ ঠিকানা প্রদান।
উপরের পেইজের ঠিকানা বাটনে ক্লিক করার পর নিম্মের পেইজ ওপেন হবে।
এই পেইজ থেকে পর্যায়ক্রমে নিম্মোক্ত তথ্যগুলো পূরণ করতে হবে। যথা-
- প্রথমে আপনার দেশ সিলেক্ট করতে হবে।
- ভোটার ঠিকানা সিলেক্ট করে বর্তমান ঠিকানা বা স্থায়ী ঠিকানায় টিক দিতে হবে।
- বর্তমান ঠাকানা পূরণ করতে হবে।
- স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করতে হবে।
- ভোটার এরিয়া নির্বাচন করতে হবে।
তবে মনে রাখতে হবে যে,লাল (*) স্টারমার্ক করা অপশন গুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সমস্ত ঠিকানা যথাক্রমে বসিয়ে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করলে পরবর্তী পেইজে নিয়ে যাওয়া হবে।
ধাপ-১০ঃ আবেদনপত্র সাবমিট
ঠিকানা প্রদান পেইজের কাজ শেষে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করলে নিশ্চিত করণ পেইজ ওপেন হবে। এখানে কাগজপত্র সাবমিট করতে বলা হবে।
যেহেতু অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করতে অনলাইনে কোন কাগজ সাবমিট করতে হয়না সেহেতু কোন কাগজ সাবমিট করার প্রয়োজন নেই। সুতারাং এই পেইজে পূণরায় “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
এরপরে বাকী থাকবে নিশ্চিত করণ ধাপ। এখান থেকে আপনার আবেদনটি নিশ্চিত করার জন্য “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করতে হবে। সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর দেখা যাবে- অভিনন্দন, সফলভাবে আপনার নতুন ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধন অনলাইন আবেদন সাবমিট হয়েছে।
সাবমিট করার পূর্বে যদি কোন তথ্য এডিট করতে চান তাহলে “পিছনে” বাটনে ক্লিক করে তথ্যগুলো এডিট করতে পারবেন।
ধাপ-১০ঃ আবেদনপত্রের কপি ডাউনলোড ওপ্রিন্ট
আপনার আবেদনপত্র যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে মেসেজ দেখায় তাহলে আপনাকে নিম্মের পেইজে নিয়ে আসা হবে। এখান থেকে আবেদন কপি ডাউনলোড করার জন্য “ডাউনলোড” বাটনে ক্লিক করতে হবে। ডাউনলোড করার পরা Save এবং প্রিন্ট করতে হবে।
আবেদনের প্রিন্ট কপির সাথে উপরের উল্লেখিত কাগজপত্র একসাথে করে এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার কর্তৃক স্বাক্ষর ও তার ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার বসিয়ে ফরমটি সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
ধাপ-১১ঃ কাগজপত্র ভেরিফিকেশন ও বায়োমেট্রিক প্রদান
আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট কাগজ পত্র সহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে জমা দেওয়ার পর অফিসের কর্মকর্তাগণ যাচাই বাচাই তথা ভেরিফিকেশন করবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ডাকা হবে।
নির্দিষ্ট স্থানে সময় মত উপস্থিত হয়ে Biometric তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনার সকল তথ্য ঠিক থাকলে ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে আপনার মোবাইলে ১০৫ নাম্বার থেকে এসএমএসের মাধ্যমে আইডি নাম্বার জানিয়ে দেওয়া হবে।
এরপর আপনি সেই নাম্বার দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ভোটার আইডি কার্ডটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারবেন। আর এটি অনলাইন কপি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। আর নির্দিষ্ট দিনে সময়মত নির্বাচন অফিসে গিয়ে আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
অফলাইনের মাধ্যমে ভোটার হওয়ার নিয়ম
অপলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম নং ২ পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যুক্ত করে ঐ অফিসেই জমা দিতে হবে। এরপর তারা ভেরিফিকেশন করে আপনাকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি প্রদানের জন্য ডাকবে।
সময়মত গিয়ে Biometric তথ্য প্রদান করার পর একটি ভোটার স্লিপ দেওয়া হবে। অতপর আপনার মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে আইডি নাম্বার জানিয়ে দেওয়া হবে।
এরপর ডাউনলোড করতে বা নির্দিষ্ট দিনে সময়মত নির্বাচন অফিসে গিয়ে আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
শেষ কথা।
উপরের নিয়মটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি সহজেই নতুনভাবে ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারবেন।
মাশাল্লাহ এতো সুন্দর ভাবে বিস্তারিত লিখে দিয়েছেন। যাহা সচারাচর কেউ লিখে না।ধন্যবাদ আপনাকে।দীর্ঘ জীবিত হোন
আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন।
আলহামদুলিল্লাহ । লেখাটি পড়ে
উপকৃত হয়েছি । জাঝাকাল্লাহু তায়া’লা খাইর ।
আলহামদুলিল্লাই। শুকরান।